স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারির চাকরি জাতীয়করণসহ ১৩ দফা দাবিতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে সোমবার ১৪ ই নভেম্বর মাগুরায়মাগুরায় জমিয়তুল মোদার্রেছীনের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য সরকার প্রণীত ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর বর্ণিত মাদ্রাসা শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যবই প্রণয়ন সহ ১৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় মাগুরা জেলা সদরে ১৪ তারিখ সোমবার সকাল ১০টায় শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রধানের কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদারেসিন মাগুরা জেলা শাখা। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাগুরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে মাগুরা শহরের ভায়না মোড় হতে মাগুরা সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা জেলা জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক জনাব মাওলানা মোঃ আলমগীর কোবির, মাগুরা সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা মোঃ মামুনুর রশিদ, মহম্মদপুর উপজেলা জমিয়তের সভাপতি জনাব মাওলানা মোঃ মনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জনাব মাওলানা মোঃ অহিদুজ্জামান, শ্রীপুর উপজেলা জমিয়াতের সভাপতি জনাব মাওলানা মোঃ আব্দুল গফফার, সাধারণ সম্পাদক জনাব মাওলানা মোঃ নুর উদ্দিন, শালিখা উপজেলা জমীয়াতের সভাপতি জনাব মাওলানা মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জনাব মাওলানা মোঃ হাফিজুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মাগুরা জেলা শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ সহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক মন্ডলী, সুধীজন, বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় নেতৃবৃন্দ বলেন,২০২৩ সাল থেকে এনসিটিভি স্কুল ও মাদ্রাসা একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম চালুকরনার্থে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বাংলা ,ইংরেজি ,ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত ,শিল্প সংস্কৃতি ,স্বাস্থ্য সুরক্ষা ,জীবন জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি ,বিজ্ঞান বই সমূহ স্কুলমাদ্রাসায় বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্ণিত পাঠ্যপুস্তক মাদ্রাসা শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য- উদ্দেশ্য (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ বর্ণিত) এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপেক্ষা করে রচিত হয়েছে। এসব পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি ,চিত্র ,শব্দ ,বাক্য ,তথ্য উপাত্ত ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে শংকিত করে তুলবে।সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণির নয়টি বইয়ের মধ্যে কোরআন -সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম ,আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি-সাহিত্যিকদের বাণী, উদ্ধৃতি নীতি-নৈতিকতা বর্জিত, সৃষ্টিকারী কোন বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত আপত্তিজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ঈমান -আদর্শ ও চরিত্রবিধ্বংসী ,নীতি নৈতিকতা বর্জিত, উলঙ্গ -বেহায়াপনা উচ্ছৃংখল যৌন উদ্দীপক বিষয় সম্বলিত পাঠ। ৯১ ভাগ মুসলমানের দেশে পাশ্চাত্য ও দেব-দেবীর বিশ্বাস ও তাদের আরাধনার শিক্ষা সংস্কৃতির আদলে তৈরি বইগুলো মাদ্রাসায় পড়ানোর উপযুক্ত নয়, এমনকি স্কুলের জন্যেও উপযোগী নয় এ ধরনের পাঠ্যপুস্তক মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত এবং নির্দেশিত হলে, মাদ্রাসার শিক্ষাবান্ধব সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ধর্ম ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল অর্জনকে ম্লান করে দিবে, যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। মাগুরা জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে আশু যৌক্তিক সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের জোর দাবি জানান।
এছাড়াও নেতৃবৃন্দ- মাদ্রাসা শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ উপযোগী স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্যবই (এনসিটিবি), মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিজ্ঞ-বিশেষজ্ঞ আলেমদের সমন্বয়ে প্রণয়ন, দাবীকৃত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পাঠদান অব্যাহত রাখা, সংযুক্ত ইবতেদায়ী প্রধান সহ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন/ভাতা প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি, টিফিনসহ সুযোগ-সুবিধা প্রদান, সাধারণ শিক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার দাখিল পরীক্ষার জন্য মূল বিষয় ঠিক রেখে সমন্বয় করে এক হাজার নম্বর নির্ধারণ, সকল স্তরের বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীগণের চাকুরি জাতীয়করণ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়া অবিলম্বে প্রদাহসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেন।
মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
Leave a Reply